সবাই তাদের চুল ভালোবাসে। চুল লম্বা, ঘন ও সিল্কি হলে ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলাও অপরিহার্য। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে সবাই চুলের যত্ন নিতে বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং তেল ব্যবহার করে থাকে। অবশ্যই, এই সমস্ত পণ্য ব্যবহারে কোন ক্ষতি নেই, তবে এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহার চুলের ক্ষতি হতে পারে। চুল শুষ্ক ও প্রাণহীন হয়ে পড়ে এবং ভেঙ্গে যেতে থাকে। এটি এড়াতে কেউ কেউ চুলের পণ্য পরিবর্তন করেন, আবার কেউ কেউ চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ওষুধ খাওয়া শুরু করেন, তবে আমরা আপনাকে ঘরোয়া প্রতিকার চেষ্টা করার পরামর্শ দেব।
চুল সিল্কি এবং লম্বা করার ঘরোয়া প্রতিকার
1. নারকেল/অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করুন
উপাদান :
দুই থেকে তিন টেবিল চামচ নারকেল বা অলিভ অয়েল
তোয়ালে
ব্যবহারের পদ্ধতি:
নারকেল বা অলিভ অয়েল পছন্দ অনুযায়ী নেওয়া যেতে পারে।
তেল হালকা গরম করে মাথার ত্বক ও চুলে লাগান।
এর পরে, প্রায় 15 মিনিটের জন্য হালকা হাতে মাথার ত্বক এবং চুল ম্যাসাজ করুন।
ম্যাসাজ করার পর গরম পানিতে তোয়ালে ছেঁকে তা দিয়ে চুল ঢেকে দিন।
আধা ঘণ্টা পর ভালো কোনো শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে তারপর কন্ডিশনার করতে ভুলবেন না।
কতবার ব্যবহার করতে হবে:
সপ্তাহে অন্তত দুবার এই ঘরোয়া উপায়টি ব্যবহার করে দেখুন।
নিম্নরূপ উপকারী:
গরম তেল দিয়ে মাথার ত্বক এবং চুলে ম্যাসাজ করলে চুলের ফলিকলগুলিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি পাওয়া যায়, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ম্যাসাজের মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনও ভালো হয়। ম্যাসাজের মাধ্যমে তেলগুলো চুলের গভীরে গিয়ে কন্ডিশন করে, যার কারণে চুল নরম ও সিল্কি দেখায়। নারকেল তেলে উপস্থিত বৈশিষ্ট্য চুলে প্রোটিনের ঘাটতি রোধ করে। একই সময়ে, জলপাই তেলে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো অনেক গুণ রয়েছে। এই দুটি তেলই চুলের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। চুল লম্বা এবং সিল্কি করার টিপস হিসাবে এই তেলগুলি ব্যবহার করুন।
2. ডিম
উপাদান :
একটি কাঁচা ডিম
এক চামচ জলপাই তেল
এক চামচ মধু
ঝরনা ক্যাপ
ব্যবহারের পদ্ধতি:
ডিম ভেঙ্গে অন্যান্য উপকরণের সাথে মিশিয়ে নিন।
তারপর এটি মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে লাগান।
মিশ্রণটি প্রয়োগ করার পরে, একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে আপনার চুল ঢেকে রাখুন এবং প্রায় আধা ঘন্টা অপেক্ষা করুন।
এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার করুন।
কতবার ব্যবহার করতে হবে:
এই প্রতিকার সপ্তাহে একবার বা দুইবার করা যেতে পারে।
নিম্নরূপ উপকারী:
ডিম প্রোটিনের সবচেয়ে ভালো উৎস এবং চুলের মজবুত করার জন্য প্রোটিন প্রয়োজন। এছাড়াও ডিমে সালফার, জিঙ্ক, আয়রন, আয়োডিন এবং ফসফরাসের মতো পুষ্টি উপাদানও রয়েছে। ডিমে উপস্থিত পেপটাইড চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের ফলিকল উন্নত করে। এ ছাড়া ডিমে থাকা ভিটামিন-এ, ই এবং ডি চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলকে লম্বা, ঘন ও সিল্কি করে। যদি বলা হয় ডিম প্রাকৃতিক কন্ডিশনার, তাহলে ভুল হবে না। চুল লম্বা ও সিল্কি করতে ঘরোয়া টিপস হিসেবে ডিম ব্যবহার করা যেতে পারে।
3. অ্যালোভেরা
উপাদান :
এক কাপ অ্যালোভেরা জেল
দুই টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল
দুই চা চামচ মেথি গুঁড়া
ঝরনা ক্যাপ
ব্যবহারের পদ্ধতি:
একটি পাত্রে এই সমস্ত উপাদানগুলি রাখুন এবং ভালভাবে মেশান।
তারপর এই মিশ্রণটি চুলের গোড়া থেকে উপরের প্রান্ত পর্যন্ত ভালো করে লাগান।
এরপর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে দিন। এটি রাতে ঘুমানোর আগেও লাগাতে পারেন।
পরদিন সকালে শ্যাম্পু এবং তারপর কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কতবার ব্যবহার করতে হবে:
এই পদ্ধতিটি সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিম্নরূপ উপকারী:
ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যও অ্যালোভেরা উপকারী। এটিতে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং প্রোটিওলাইটিক এনজাইম রয়েছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে, ঘৃতকুমারী চুলকে শিকড় থেকে শক্তিশালী করে এবং তাদের বৃদ্ধির সুযোগ দেয়। অ্যালোভেরাতেও অ্যান্টিসেপটিক এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা চুলকে খুশকি থেকে রক্ষা করে এবং একটি সিল্কি চেহারা দেয়। একই সময়ে, ক্যাস্টর অয়েল শুধুমাত্র চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে না, বরং তাদের ঘন এবং নরম করে তোলে। চুল লম্বা এবং সিল্কি করার জন্য অ্যালোভেরা লম্বা এবং সিল্কি চুলের টিপস হিসেবে চমৎকার।
4. দই
উপাদান :
এক কাপ দই
আমলা গুঁড়ো দুই চামচ
ব্যবহারের পদ্ধতি:
এই দুটি উপাদান একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন।
তারপর এই পেস্টটি মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে লাগান।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কতবার ব্যবহার করতে হবে:
এই ঘরোয়া প্রতিকারটি সপ্তাহে একবার বা দুইবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
নিম্নরূপ উপকারী:
আপনি যদি ভাবছেন কিভাবে চুল সিল্কি করবেন, তাহলে দই ব্যবহার করুন। দইতে প্রোবায়োটিক নামক একটি যৌগ থাকে, যা চুলের ফলিকলের অ্যানাজেন স্তরকে বাড়ায়। চুলের বৃদ্ধি ঘটে অ্যানাজেন পর্যায়ে। দই ব্যবহার চুলের গোড়া থেকে মজবুত করে এবং চুলকে উজ্জ্বল করে। দইকে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর ব্যবহারে খুশকির সমস্যাও শেষ হয়ে যায়। মনে রাখবেন যে কিছু লোকের দুধ এবং দুধের পণ্যগুলিতে পাওয়া প্রোটিনের জন্য অ্যালার্জি হতে পারে। অতএব, এই ধরনের ব্যক্তিদের শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞের পরামর্শে এই ঘরোয়া প্রতিকার ব্যবহার করা উচিত।